স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নারায়ণগঞ্জঃ পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সোনারগাঁ পৌরসভার নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকাছাড়া রয়েছে বিএনপির নেতা কর্মীরা।সরকার প্রথম বারের মতো দলীয় প্রার্থী ও প্রতিক ব্যবহার করে পৌর নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থন আদায়ের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝেও বিরাজ করছে উৎসাহ উদ্দীপনা। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলরও প্রচার প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সোনারগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র বাংলাদেশ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগাস্টি সমিতির সাবেক সভাপতি সাদেকুর রহমান ভূইয়া, থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ যুব আইনজীবি পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মোল্লা প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনে বিএনপি’র একক প্রার্থী থাকলেও বাকী তিনজনই আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করলেও শেষ পর্যন্ত এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বিকে নির্বাচন করেছে কেন্দ্র। তবে গত ১৭ অক্টোবর সোনারগাঁ পৌরসভার উদ্যেগে প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনার চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ পুরস্কার উপলক্ষে দোয়া শোকরানা অনুষ্ঠান ও জনসভার আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও স্থানীয় আওয়ামলীগ নেতারা পৌরসভা মেয়র পদে সাদেকুর রহমানকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছিলেন। অপরদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বির পক্ষে নির্বাচনি কাজ করছেন। সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মোল্লা জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করছেন। ভোটাররা জানায়, ২০০১ সালে সোনারগাঁ ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভায় উন্নীত হয়। সে সময়ের নির্বাচনে মেয়র পদে তৎকালীন থানা বিএনপি’র সভাপতি সাইদুর রহমান মোল্লা ২০১০ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে নির্বাচনে সাদেকুর রহমান গাজী মজিবুর রহমানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। সোনারগাঁ পৌরসভার মেয়র সাদেকুর রহমান জানান, আধুনিক পৌরসভা গড়ার লক্ষে পৌরভবন, রাস্তাঘাটসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। ভোটাররা পুনরায় আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করলে আমার অসম্পূর্ণ কাজগুলো সমাপ্ত করব। তিনি বলেন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন যাবত জড়িত থেকে আমি জনগণের ভোটে চার বার চেয়ারম্যান ও একবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি জানায়, আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সোনারগাঁ পৌরসভাকে নতুন ভাবে সাজাব। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোশারফ হোসেন জানায়, আমাকে ভোটাররা ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করলে জনগণকে সাথে নিয়ে সকল সমস্যা পর্যায়ক্রমে সমাধান করব। সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জানান আমাদের একক প্রার্থী থাকায় আমরা ভাল অবস্থানে রয়েছি। তবে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় আমরা সমস্যার মধ্যে রয়েছি। এসময় তিনি নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার আহবান জানান তিনি। প্রসঙ্গত, সোনারগাঁয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) ৫ মেয়র প্রার্থী ও ৩৫ কাউন্সিলর প্রার্থী উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা তারিফুজ্জামানের কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
মেয়র পদে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মুজিবুর রহমান ও বিএনপি নেতা হাজী সালাউদ্দিন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করলেও শেষঅব্দি তারা দলের মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করেন এবং মনোনয়ন পত্র জমাদান থেকে বিরত থাকেন। মনোনয়ন পত্র জমাদানকারী প্রার্থীরা হলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাড. ফজলে রাব্বী, বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান মোল্লা ও এ.কে.এম জাহিদুর আজাদ। এছাড়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর (পুরুষ) পদে ৩১ প্রার্থী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করলেও ২৯ প্রার্থী তা জমা দেন। তবে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে বারবার নির্বাচিত কাউন্সিলর জাহেদা আক্তার মনিসহ মোট ৬ প্রার্থী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন এবং ৬ জনই তা জমা দিয়েছেন। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মুজিবুর রহমান মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করলেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে মনোনীত প্রার্থী এ্যাড. ফজলে রাব্বীকে সমর্থন করেন। এছাড়া সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাড. সামছুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামও এ্যাড. ফজলে রাব্বীকে সমর্থন করেন এবং তার মনোনয়ন পত্র জমা দানের সময় উপস্থিত থাকেন। তাছাড়া এ সময় সোনারগাঁয়ের সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সারের নেতৃত্বে আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply